সর্বশেষ

"সম্মিলিত শিক্ষানবিশ আইনজীবী সংগ্রাম পরিষদ"এর ঘোষণাপত্র প্রকাশ

গত ১৯ জুন ২০২০, শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের বেশ কিছু সংগঠন শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের বিভিন্ন যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নের জন্য একজোট হয়ে কাজ করবেন বলে ঘোষণা এসেছিল। উক্ত ঘোষনায় সংগঠনের সমন্বয়কবৃন্দ " সম্মিলিত শিক্ষানবিশ আইনজীবী সংগ্রাম পরিষদ " এই ব্যানারে কাজ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন।

সংগঠনগুলো হলঃ

১) বাংলাদেশ শিক্ষানবিশ আইনজীবী সমিতি
২) বাংলাদেশ শিক্ষানবিশ আইনজীবী কল্যাণ পরিষদ
৩) ভুক্তভোগী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় রীটকারী ছাত্রছাত্রী পরিষদ
৪) শিক্ষানবিশ ও নবীন আইনজীবীদের ৫ দফা

আজ "সম্মিলিত শিক্ষানবিশ আইনজীবী সংগ্রাম পরিষদ" তাদের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করে। পাঠকদের সুবিধার্থে তা নিচে হুবুহু দেওয়া হল।

প্রিয় শিক্ষানবিশ আইনজীবী বন্ধুরা,

আপনারা জানেন গত ২৮ শে ফেব্রুয়ারী প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পর ২০১৭ সালে ও ২৮ শে ফেব্রুয়ারী ২০২০ ইং তারিখে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ শিক্ষানবিশ আইনজীবীগণ যখন লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করি ঠিক তখনই করোনা ভাইরাস জনিত বৈশ্বিক মহামারীর কারনে ১৭ই মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং পরবর্তীতে ২৬শে মার্চ দেশব্যাপী লকডাউন শুরু হয়। পরবর্তীতে কয়েক দফা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই ছুটি বৃদ্ধি করা হয় এবং সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৬ই আগস্ট পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও করোনা ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না, প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এমন পরিস্থিতি থেকে দেশ কবে মুক্তি পাবে সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে বলা মুশকিল । এমন অবস্থায় অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য লিখিত পরীক্ষা অনিশ্চিত।

এখানে উল্লেখযোগ্য যে, ২০১৭ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারী " বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বনাম দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি " মামলায় আপিল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত রায়ের ১২ নাম্বার নির্দেশনা " The Bar Council shall complete the enrollment process of the applicants to be enrolled as advocates in the district court each calendar year. " অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যেই এনরোলমেন্ট প্রসেস সম্পন্ন করার লক্ষ্যে দ্রুত লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার জন্য এবং লিখিত পরীক্ষার খাতায় পরীক্ষার্থীর নাম ও রোল লিখার জন্য ( OMR) সংযুক্তির জন্য গত ১৬ই মার্চ ২০২০ ইং তারিখে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বরাবর এক‌টি স্মারকলিপি প্রদান করি এবং উক্ত স্মারকলিপির অনুলিপি বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান, এনরোলমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান, লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির চেয়ারম্যান ও সচিব বরাবরও প্রদান করি।

আপনারা জানেন, ২১ শে জুলাই ২০১৭ ইং তারিখের পর দীর্ঘ ২ বছর ৭ মাস পরে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। দীর্ঘ সময় পরে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা পারিবারিক - সামাজিক - আর্থিক চাপের মধ্যে আছে, তারসঙ্গে বর্তমান করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা ও লিখিত পরীক্ষা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ার জন্য আমরা হতাশায় ভুগছি এবং জীবন বিতৃষ্ণ হয়ে উঠছে।

ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি সর্বশেষ এনরোলমেন্ট পরীক্ষাটি শেষ হতে সময় লেগেছিলো ১ বছর ৫ মাস। বর্তমান করোনা মহামারী কবে নিরসন হবে সে বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। যারফলে, লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য অনিশ্চিত।

এমন অবস্থায় যদি পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ২০১৭ ও ২০২০ সালে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণদের লিখিত পরীক্ষা বাতিল করে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে অথবা লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষা বাতিল করে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে এনরোলমেন্ট প্রসেস শেষ করা না হয় সেক্ষেত্রে আমরা মনে করি আগামী ২০২১ সালেও বর্তমান এনরোলমেন্ট পরীক্ষার সম্পূর্ণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। এরফলে পরীক্ষার জট আরো দীর্ঘায়িত হবে এবং আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী ২০২১ সালে আরেকটি এনরোলমেন্ট পরীক্ষার প্রসেস সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। আমাদের মনে হয় এক্ষেত্রে বিষয়টি আদালত অবমাননা হবে।

বছরের পর বছর সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের অবমাননা আইনের ছাত্র হয়ে আমরা কখনোই প্রত্যাশা করি না। তাই ২০১৭ ও ২০২০ সালে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করার মাধ্যমে ২০২০ সালের মধ্যেই এনরোলমেন্ট প্রসেস সম্পন্ন করে ২০১৭ সালের আপিল বিভাগের রায়টি কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ইতিপূর্বে অসংখ্যবার শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা চেষ্টা করেছে।

The Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Order, 1972 এর Article 40(1) এবং 40(2)(m) অনুযায়ী গেজেট বা প্রজ্ঞাপন দ্বারা বিধি প্রণয়ন করে ২০১৭ ও ২০২০ সালে প্রিলিমিনারি উর্ত্তীর্ণদের সনদ প্রদান করতে পারেন। এই বিষয়ে উক্ত অর্ডার এর Article (40)(1) এ বলা হয়েছে ” The Bar Council may, with the prior approval of the Government by notification in the official Gazette, make rules to carry out the purposes of this order, অর্থাৎ বার কাউন্সিল অর্ডারের উদ্দেশ্যে পূরণের জন্য বিধি প্রণয়ন করতে পারেন। কি কি বিষয়ে বিধি প্রণয়ন করতে পারেন সেই বিষয়ে বলা হয়েছে Article 40(2) এ। Article 40(2)(m) বলা হয়েছে ” the examination to pass for admission as an advocate. ” অর্থাৎ এডভোকেট হিসাবে এনরোলমেন্ট হওয়ার জন্য যে পরীক্ষা পাশ করতে হবে সেই বিষয়ে বার কাউন্সিল বিধি প্রণয়ন করতে পারেন।
উপরোক্ত দুইটি অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ২০১৭ ও ২০২০ সালে প্রিলিমিনারি উর্ত্তীর্ণ শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিতে পারেন।

২০১৮ সালের মে মাসের বার কাউন্সিলের নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কর্তৃক প্রকাশিত ভোটার তালিকা অনুসারে আইনজীবীর সংখ্যা ৪৩৮৮৪ জন। ২০১৮ সালের ২৩ শে ডিসেম্বরে ৭৭৩২ জন আইনজীবী তালিকাভুক্ত হয়। দুইটি সংখ্যা যোগ করলে হয় ৫১৬১৬ জন। গত দুই বছরে অনেক আইনজীবী মারা গেছেন, এরমধ্যে অর্ধেকেরও বেশি আইনজীবী নন প্র্যাকটিসনার। ১৭ কোটি জনসংখ্যার জন্য এই স্বল্প সংখ্যক আইনজীবী অপ্রতুল।

অতএব, উপরে উল্লেখিত আপিল বিভাগের রায়ের নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বর্তমান করোনা মহামারীর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবং " The Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Order, 1972" অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনাটি ২০২০ সাল থেকেই কার্যকর করে দেশে আইনজীবী সংকট নিরসনের জন্য ও এনরোলমেন্ট প্রসেস প্রতিবছর নিয়মিত সম্পন্ন হওয়া এবং এই সংক্রান্ত সমস্যা ও অনিশ্চয়তার স্থায়ী সমাধানসহ নিম্নোক্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য " সম্মিলিত শিক্ষানবিশ আইনজীবী সংগ্রাম পরিষদ " কাজ করবে।

দাবি সমূহঃ

১) ২০১৭ সালের আপিল বিভাগের রায়ের ১২ নাম্বার নির্দেশনাটি মুজিববর্ষ ২০২০ সাল থেকে কার্যকর করা হোক অর্থাৎ আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যেই এনরোলমেন্ট প্রসেস সম্পন্ন করার অনুরোধ করছি। যেহেতু করোনা পরিস্থিতির জন্য লিখিত পরীক্ষা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য অনিশ্চিত এবং লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করা সময় সাপেক্ষ বিষয়, সেহেতু লিখিত পরীক্ষা বাতিল করে ভাইভা নিয়ে এনরোলমেন্ট প্রসেস শেষ করার অনুরোধ করছি। যদি করোনা পরিস্থিতির জন্য ভাইভাও নেওয়া সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে লিখিত ও ভাইভা উভয়ই বাতিল করে ২০১৭ ও ২০২০ সালে প্রিলিমিনারি উর্ত্তীর্ণদের সনদ প্রদান করে ২০২০ সালের মধ্যেই এনরোলমেন্ট প্রসেস সম্পন্ন করার অনুরোধ করছি।

২) আগামীতেও যেকোনো ধরনের জাতীয় দুর্যোগ ও ক্রান্তিকালীন সময়েও যেনো আপিল বিভাগের নির্দেশ অনুযায়ী এনরোলমেন্ট প্রসেস প্রতি বছর নিয়মিত সম্পন্ন করা যায় সেজন্য বিধি এমনভাবে সংশোধন করার অনুরোধ করছি যেনো প্রিলিমিনারি, লিখিত, ভাইভা এই তিনটি পরীক্ষার মধ্যে যেকোনো একটি অথবা দুইটি পরীক্ষা বাতিল করে বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট প্রসেস সম্পন্ন করার ক্ষমতা থাকে। অর্থাৎ ক্রান্তিকালীন সময়ে এনরোলমেন্ট প্রসেস সম্পন্ন করার এবং এনরোলমেন্ট এর জট নিরসনের জন্য স্থায়ী সমাধানের বিধান বিধিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অনুরোধ করছি।

৩) প্রতি বছরের কখন এনরোলমেন্ট পরীক্ষার প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা হবে সে বিষয়টির সময় বা তারিখ সুনির্দিষ্টভাবে বিধিতে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ করছি এবং বার কাউন্সিলের প্রতিটি নির্বাচিত কমিটি তার পূর্ণ মেয়াদের মধ্যে কমপক্ষে তিনটি এনরোলমেন্ট পরীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতাও যুক্ত করার অনুরোধ করছি।

৪) শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের দৈনিক সম্মানী বা ভাতা নূন্যতম ৩০০ টাকা নির্ধারণ করার জন্য বার কাউন্সিল কর্তৃক পদক্ষেপ গ্রহণ করার অনুরোধ করছি।

মন্তব্য লিখুন