বার কাউন্সিলে ইন্টিমেশন জমা দান পদ্ধতি (২০২০)
গত ৪ জুন, ২০২০ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এলএল.বি ফাইনাল এর রেজাল্ট
প্রকাশিত হয়েছে। সাধারণত রেজাল্ট প্রকাশের ১ মাসের মধ্যে স্ব স্ব কলেজে
সার্টিফিকেট ও মার্কশিট চলে আসে। সার্টিফিকেট ও মার্কশিট হাতে পাওয়া
পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অনেকে অনলাইন থেকে মার্কশিট প্রিন্ট নিয়ে
ইন্টিমেশন জমা দেন। পূর্বে এমন নিয়ম থাকলেও বর্তমানে নেই। যদি কেউ এভাবে
জমা দেয় তাহলে তার টাকা ও সময় উভয়ই বৃথা হয়ে যাবে। অর্থাৎ তাকে আবার
ইন্টিমেশন জমা দিতে হবে।
.
সার্টিফিকেট ও মার্কশিট হাতে আসার পূর্বে নিম্নে কাগজপত্র রেডি করুন :
১। পাসপোর্ট সাইজের ছবি ৫ কপি (কালো কোর্ট, টাই ও সাদা শার্ট পরিহিত)। ৪ কপি ফরমের সাথে এবং ১ কপি এফিডেভিট এর সাথে দিতে হবে।
২। এস.এস. সি’র সার্টিফিকেট ও মার্কশিট এর ফটোকপি।
৩। এইস.এস. সি’র সার্টিফিকেট ও মার্কশিট এর ফটোকপি।
৪। ডিগ্রি / অনার্স এর সার্টিফিকেট ও মার্কশিট এর ফটোকপি।
৫। মাস্টার্স এর সার্টিফিকেট ও মার্কশিট এর ফটোকপি। (যদি মাস্টার্স না থাকে তাহলে প্রয়োজন নেই)
৬। জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
৭। এলএল.বি এর সার্টিফিকেট ও মার্কশিট এর ফটোকপি।
.
উপরের কাগজ-পত্র প্রস্তুত করার পর (এলএল.বি এর সার্টিফিকেট ও মার্কশিট
হাতে পাওয়ার পর) করনীয় কাজকে আমরা কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করে উল্লেখ করতে
পারি-
.
প্রথম পর্যায় : প্রথমে বার কাউন্সিল অফিসে যেতে হবে।
বর্তমানে ঢাকার বাংলামটরে রুপায়ন ট্রেড সেন্টারে লিফট এর-৪ নেমে অফিস রুম
থেকে একটা হলুদ এবং একটা নীল রঙের টাকা জমার রশিদ নিতে হবে। অতপর পঞ্চম
ফ্লোরে উঠে ব্যাংকে (SIBL) নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দিতে হবে। প্রত্যেক
রশিদে চারটি করে পার্ট থাকবে। প্রত্যেক পার্টে তারিখ, টাকার পরিমাণ, নিজের
নাম, পিতার নাম, কোন জেলার বারে কাজ করবেন সেই জেলার নাম, মোবাইল নাম্বার
লিখতে হয়। যেমন আপনি যদি ঢাকা জর্জ কোর্টে কাজ করতে চান তাহলে ঢাকা, নড়াইল
জর্জ কোর্টে হলে নড়াইল, খুলনা হলে খুলনা, চট্টগ্রাম হলে চট্টগ্রাম ইত্যাদি।
অবশ্য এ্যাডভোকেট হওয়ার পর নির্দিষ্ট ফি দিয়ে বার চেঞ্জ করা যায়। ব্যাংক
দুই পার্ট রেখে দিবে। বাকী দুই পার্ট নিয়ে আবার ৪র্থ ফ্লোরে পূর্বের যায়গায়
গিয়ে উক্ত রশিদ দেখিয়ে ৩ পাতার ইন্টিমেশন ফরম নিতে হবে। এরা রশিদের কোনো
পার্ট রাখবে না। (এফিডেভিটের একটি নমুনা কপি সাথে থাকবে)। অতপর ১০০ টাকা
মূল্যের ২ টি নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প ক্রয় করতে হবে। প্রথম পর্যায়ের কাজ
শেষ।
(বার কাউন্সিলে ইন্টিমেশন জমা দেবার সময় ৫০০+৮০০= ১৩০০ টাকা জমা দিতে হয়।)
.
দ্বিতীয় পর্যায় : নিজের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে ৩ পাতার উক্ত ফরম
পূরন করতে হবে। কেউ চাইলে ফরম ফটোকপি করে রাফ হিসেবে একবার পূরণ করতে
পারেন। ১০০ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প দুটিতে বার কাউন্সিলের প্রদানকৃত
এফিডেভিটের নমুনা কপিতে যা আছে তা লিখে পূরণ করতে হবে এবং উক্ত স্ট্যাম্প
এফিডেভিট করতে হবে। স্ট্যাম্পের উপরে ১ কপি ছবি লাগাতে হবে। এ পর্যায়ে একজন
সিনিয়রের নিকট যেতে হবে। সিনিয়র এমন একজনকে করতে হবে যিনি আইনজীবী হিসেবে
কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞ। ফরমে সিনিয়রের কিছু তথ্য আছে তা লিখতে হবে। অতপর
সিনিয়র সকল কাগজ-পত্র, ছবি ইত্যাদি সত্যায়িত করবেন।
.
তৃতীয়
পর্যায় : সিনিয়রের কাজ শেষ হলে সমস্ত কাগজ-পত্র ফটোকপি করতে হবে। এবার মূল
সেট এবং ফটোকপি উভয় সেট নিয়ে বাংলামটর থেকে দক্ষিণে পরিবাগে- বোরাক টাওয়ার
এর তৃতীয় ফ্লোর এ যেতে হবে। সেখানে অফিস মেইনকপি রেখে দিবে এবং ফটোকপিতে
রিসিভ সিল মেরে আপনাকে দিয়ে দিবে। রিসেভ কপি নিয়ে চলে আসুন। আপনার কাজ শেষ।
মনে রাখতে হবে আপনার কাছে টাকা জমার হলুদ ও নীল রঙের দুইটি রশিদ
রয়েছে। উভয়ের দুটি করে পার্ট। উভয় রশিদের এক পার্টের উপরে লেখা আছে- “এই
অংশ বার কাউন্সিল অফিসে জমা দিন” এই অংশ দুটি ছিড়ে মূল সেটের সাথে পিন
করুন। অন্য দুই অংশ ফটোকপি সেটের সাথে পিন করুন। এই সেট রিসিভ করাতে হবে।
.
চতুর্থ পর্যায় : ৬ মাস অপেক্ষা করুন। ৬ মাস অতিবাহিত হলে উক্ত রিসিভ কপি
নিয়ে বোরোক টাওয়ার অর্থাৎ যেখানে ইন্টিমেশন জমা দিয়েছিলেন সেখানে যান। তারা
আপনার রিসিভ কপির তারিখ ও নাম দেখে অনলাইনে চেক করবে। যদি সকল কাগজ-পত্র,
ছবি ঠিক থাকে তাহলে কিছু সময়ের মধ্যে আপনাকে রেজিষ্ট্রশন কার্ড দিয়ে দিবে।
আর যদি কোনো কাগজ শর্ট থাকে বা ছবি কম থাকে বা এফিডেভিট না থাকে বা
সিনিয়রের তথ্য ঠিক না থাকে তাহলে আপনাকে রেজি: কার্ড দিবে না। কোথায় সমস্যা
আছে তা জানিয়ে দিবে। যেটি ঘাটতি থাকবে সেটি আবার জমা দিতে হবে। অতপর এক
সপ্তাহ পর আপনি রেজি: কার্ড পাবেন। যদি রিসিভ কপি হারিয়ে যায় তাহলে সেখানে
গিয়ে নিজের নাম, পিতার নাম ও ইন্টিমেশন জমার তারিখ একটি কাগজে লিখে জমা
দিলেও আপনাকে রেজি: কার্ড দিয়ে দিবে।
.
পঞ্চম পর্যায় : রেজি: কার্ড
হাতে পাওয়ার পর বার কাউন্সিল পরীক্ষার ফরম ফিল-আপের নোটিশ দিলে আপনি ফরম
ফিল-আপ করতে পারবেন এবং পরীক্ষা দিতে পারবেন। এই রেজি: কার্ডের মেয়াদ ৫
বছর। অর্থাৎ ৫ বছর পর্যন্ত আপনি পরীক্ষা দিতে পারবেন। মনে রাখতে হবে ৫ বছর
বলতে ৫ বার বোঝায় না। আপনি রেজি: কার্ড হাতে পেলে পরবর্তী ৫ বছর যে কয়বার
পরীক্ষা হবে আপনি দিতে পারবেন।
(পরীক্ষার ফরম ফিলাপ ও পরীক্ষা বাবদ বার কাউন্সিলে ১০০০+৩৭০০= ৪৭০০ টাকা জমা দিতে হয়)
[আপনিও পরামর্শ বিভাগে লেখা পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠাতে ইমেইল করুন ain24team@gmail.com ।]
মন্তব্য লিখুন