সর্বশেষ

চট্টগ্রামে শিক্ষানবীশ আইনজীবীরা তাদের অধিকার ও মর্যাদা চান

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল প্রিলি পরিক্ষায় উত্তীর্ণ (২০১৭-২০২০ ইং) চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষানবীশ আইনজীবীদের উদ্যোগে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে সাউর্দান ইউনিভারসিটির মেধাবী ছাত্র, কৃতিত্বের সাথে গঈছ উত্তীর্ণ, চট্টগ্রাম জজ কোর্টের শিক্ষানবীশ আইনজীবী মো. খোরশেদুল আলম আকিব এর সভাপতিত্বে এবং চট্টগ্রাম আইন কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জি.এস ও কৃতিত্বের সাথে এমসিকিউ উত্তীর্ণ, চট্টগ্রাম জজ কোর্টের শিক্ষানবীশ আইনজীবী মেধাবী ছাত্র মো. শাহাদাত হোসাইন এর সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধন সম্পন্ন হয়।


মানববন্ধনে সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি সিনিয়র এড. সৈয়দ মোক্তার আহমদ ও সাধারন সম্পাদক সিনিয়র এড. এএইচএম জিয়াউদ্দিন। উক্ত মানববন্ধনে এডভোকেটশীপ পরীক্ষায় এমসিকিউ উত্তীর্ণ শিক্ষানবিশ আইনজীবী তৈয়ব আলী মীর বলেন, তাদের এই মানববন্ধন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের বিরুদ্ধে নয়। মূলত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ বারকাউন্সিলের সদয় কৃপা দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এবং তাদের প্রাপ্য অধিকার আদায় করাই মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বলে মনে করেন তিনি।

এতে বক্তাগণ বারকাউন্সিলের পরীক্ষা (প্রিলি) এমসিকিউ উত্তীর্ণদের সরাসরি গেজেট করে সনদ দেওয়ার উপর বিভিন্ন যৌক্তিক বিষয় নিয়ে দাবি তুলেন। তিনি মনে করেন মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিই বাঁচাতে পারে শিক্ষানবিস আইনজীবীদের।
এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে মোক্তারদের যে অ্যাডভোকেট হিসেবে উন্নীত করেছিলেন, সে ব্যাপারটি নজির হতে পারে। তাছাড়া The Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council Order, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদমাফিক প্রাথমিক ধাপে উত্তীর্ণ ২০১৭ ও ২০২০ সালের শিক্ষানবিসদের, আদেশ ৪০(১) ও ৪০(২)(এম) অনুযায়ী গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা সনদ প্রদান করতে আইনি কোনো বাধা-নিষেধ নেই। অতএব এটি বার কাউন্সিলের সংরক্ষিত ক্ষমতা। শুধু প্রণীত বিধিতে আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে। এটি আইন মন্ত্রণালয়ের রুটিন ওয়ার্ক। বার কাউন্সিল এ মর্মে রেজুলেশন গ্রহণ করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেবে, মন্ত্রণালয় সেটির অনুমোদন দেবে, এটিই আইনের বিধান।
এক্ষেত্রে কাউন্সিল তার প্রণীত বিধির ৬০(৩)-এর যে কোনো জায়গায় সাপ্লিমেন্টারি আইন সংযুক্ত করলে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের আইনজীবী হতে কোনো আইনি বাধা থাকবে না। এমসিকিউ প্রিলি উত্তীর্ণ শিক্ষানবিশ আইনজীবী সুদীপ কান্তি নাথ খুবই কষ্ট ও আক্ষেপের সাথে বলেন, সমাজে আজ আমাদের কোন মর্যাদা নেই। মানবেতর জীবন অতিবাহিত করছি। এমন মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে বেকার শিক্ষানবিশ আইনজীবীদেরকে সরকার বা আইনজীবীদের অভিভাবক বাংলাদেশ বারকাউন্সিলের পক্ষ থেকে কোন সুযোগ সুবিধা বা প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়নি। কারণ আইনজীবী হিসেবে এখনো আমাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আজ আমরা সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছি শুধুমাত্র আইনজীবী নিয়োগদানকারী একমাত্র সংস্থা বাংলাদেশ বারকাউন্সিল কর্তৃক নিয়মিত পরীক্ষা না নেওয়ার কারণে। ২০১৪ সালের বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বনাম দারুল ইহসান মামলায় আপিলেট ডিভিশন ২০১৭ সালে পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা করেন। মামলায় ১২টি নির্দেশনার সর্বশেষ নির্দেশনা ছিল। সুতরাং প্রতি ক্যালেন্ডার ইয়ারে এনরোলমেন্ট পরীক্ষার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে, এটিই স্বাভাবিক প্রত্যাশা। ভুক্তভোগী শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের সামনের দিগন্তকে প্রসারিত করতে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের কার্যকর পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।

এমসিকিউ উত্তীর্ণ শিক্ষানবিশ আইনজীবী ফারজানা আক্তার বলেন, বাংলাদেশ বারকাউন্সিলের প্রধান কার্যাবলীর একটি হলো প্রতিবছর এমসিকিউ, লিখিত ও মৌখিক ৩ ধাপে পরীক্ষার মাধ্যমে নবীন আইনজীবী নিয়োগ প্রদান করা। কিন্তুু উক্ত সংস্থার কর্তাব্যক্তিগনের উদাসিনতায় প্রতিবছর তো দূরের কথা ৩/৪ বছরে ও একটা পরীক্ষা সম্পূর্ণ হয় না। যার কারনে আইনের সর্বোচ্চ ডিগ্রীলাভ করে ও অনেকেই বেকার ও মানবেতর জীবনযাপন করছে।

এমসিকিউ উত্তীর্ণ শিক্ষানবিশ আইনজীবী মীর হোসেন বলেন, শিক্ষানবিশ আইনজীবীগণের কেউ ৩ বছর কেউ ৫ বছর কেউ বা ৭বছরের ও বেশি সময় ধরে এডভোকেটশীপ পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করে বিগত ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত এমসিকিউ পরীক্ষায় প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষানবিশ পরীক্ষায় অংশ নেয় এবং তীব্র প্রতিযোগিতা ও প্রশ্নপত্র কঠিন হওয়ায় মাত্র ৮৭৬৪ জন উত্তীর্ণ হয়। অর্থাৎ পাশের হার মাত্র ১৩%। প্রথাগত নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী ২মাসের মধ্যে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে জেনে যখন অপেক্ষা করে আসছিলাম ঠিক তখনই বিশ্ব মহামারি কোবিড-১৯, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সমগ্র বিশ্ব ও তথা বাংলাদেশ থমকে যাওয়ায় বারকাউন্সিলের পক্ষে সময়মত লিখিত পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়ে উঠেনি।

তারা দাবি করেন, যেহেতু বাংলাদেশ বারকাউন্সিল অনাগ্রহ ও অবহেলার কারণে আমাদের জীবনের মহামূল্যবান সময় নষ্ট হয়েছে। তাছাড়া বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদফতর নিয়মিত ব্রিফিং এর বরাত দিয়ে জানা যায় যে, এই মহামারি করোনা ভাইরাস সম্পূর্ণ নির্মূল হতে আরো প্রায় ২ থেকে ৩ বছর সময় লাগবে বা মহামারি করোনা ভাইরাসের সময়কাল কবে নাগাদ শেষ হবে তা সকলের অজানা বিধায় এডভোকেটশীপ পরীক্ষার অবশিষ্ট পরীক্ষা মওকুফ করে আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক এমসিকিউ উত্তীর্ণদের মানবিক কারণে বাংলাদেশ বারকাউন্সিল আদেশ ১৯৭২ এর বিধি মোতাবেক সরকারিভাবে গেজেট করে সনদ প্রদান করা সময়ের দাবি। নচেৎ শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের জীবন থেকে মহামূল্যবান সময় আরো ২/৩ বছর চলে যাবে। বর্তমান এহেন করোনা পরিস্থিতিতে যেমন অবশিষ্ট পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়, আবার পরীক্ষার ফাঁদে ফেলে এমসিকিউ উত্তীর্ণদের মূল্যবান সময় আরো ২/৩ বছর নষ্ট হোক এটা কিছুতেই কাম্য নয় বলে দাবি উঠে।

এ মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম আইন কলেজ প্রতিনিধি হিসেবে মো. আশরাফ উদ্দিন, ফারজানা আক্তার, শিমু আক্তার, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মো. রিদোয়ান, আনোয়ার হোসেন, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধি হিসেবে তৌহিদুল ইসলাম, মোস্তাফিজ মিয়া, মোরশেদুল আলম, শৈপুল পাল, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধি হিসেবে জয় দাশগুপ্ত, আব্দুল আহাদ, বঙ্গবন্ধু ল’টেম্পল প্রতিনিধি হিসেবে এমদাদুল ইসলাম, আশরাফ উদ্দিন, ইন্টারন্যাশাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধি হিসেবে মো. মহিউদ্দিন প্রমুখ।

সূত্রঃ ডেইলী সাঙ্গু

No comments