সর্বশেষ

আদালতের শ্রেনীবিভাগ ও এখতিয়ার

বাংলাদেশের প্রতিটি আদালতের বিচারিক ক্ষমতা সংবিধান অথবা রাষ্ট্র কর্তৃক পাশ কৃত আইন দ্বারা সীমাবদ্ধ। সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের  সর্বোচ্চ আদালত এবং  তৎক্রমনিম্নভাবে জেলা পর্যায়ে  দেওয়ানি আদালত এবং ফৌজদারি আদালত রয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আদালতের বিচারিক ক্ষমতা নিম্নে আলোচনা করা হলো-

বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট

বাংলাদেশ সংবিধানের ৯৪ নং অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত হবে সুপ্রীম কোর্ট যা দুটি ভাগে বিভক্ত-

ক) আপীল বিভাগ
খ) হাইকোর্ট বিভাগ।



এই দুই বিভাগের এখতিয়ার নিম্নে আলোচনা করা হল

আপীল বিভাগের এখতিয়ার

১)  হাইকোর্ট বিভাগের রায়, ডিক্রি, আদেশ বা সাজার বিরুদ্ধে আপীল শুনানীর ও নিষ্পত্তির এখতিয়ার রয়েছে আপীল বিভাগের।
২) হাইকোর্ট বিভাগের রায়, ডিক্রি, আদেশ বা সাজার বিরুদ্ধে আপীল বিভাগের নিকট অধিকারবলে আপীল করা যাবে যেক্ষেত্রে
ক) হাইকোর্ট বিভাগ এই মর্মে সার্টিফিকেট প্রদান করেন যে, মামলাটির সাথে আইনের গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্ন জড়িত রয়েছে, অথবা
খ) কোন ব্যাক্তিকে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে, অথবা
গ) উক্ত বিভাগের অবমাননার জন্য কোন ব্যক্তিকে দন্ডদান করা হয়েছে এবং জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনের মাধ্যমে অন্যান্য ক্ষেত্রে,
৩) হাইকোর্ট বিভাগের রায়, ডিক্রি, আদেশ বা দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে যে মামলায় এই অনুচ্ছেদের (২) দফা প্রযোজ্য নয় কেবল আপীল বিভাগের অনুমতিসাপেক্ষে উক্ত মামলায় আপীল চলবে।
(৪) সংসদ আইনের দ্বারা ঘোষণা করতে পারবে যে, এই অনুচ্ছেদের বিধানসমূহ হাইকোর্ট বিভাগের প্রসঙ্গে যেরূপ প্রযোজ্য, অন্য কোন আদালত বা ট্রাইব্যুনালের ক্ষেত্রেও তাহা সেইরূপ প্রযোজ্য।

হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ার

বাংলাদেশ সংবিধান এবং অন্য কোন আইনের দ্বারা হাইকোর্ট বিভাগের উপর আদি, আপীল ও অন্য প্রকার এখতিয়ার, ক্ষমতা ও দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে-
ক) আদি এখতিয়ার- রীট, কোম্পানী এডমিরালটি ইত্যাদি সংক্রান্ত বিষয়াদি,
খ) আপীল ও রিভিশনালএখতিয়ার- জেলা ও দায়রা জজ আদালত,অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল, বিশেষ জজ, অর্থঋণ আদালত, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ইত্যাদি আদালতের রায় ও আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আপীল অথবা বিভিশন দায়ের করা যায়।
গ) আদালত অবমাননা সংক্রান্ত বিষয়াদি


অধস্তন আদালতঃ

দেওয়ানী আদালত

দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ৯ ধারা অনুযায়ী দেওয়ানী আদালত সকল প্রকার দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা বিচার করার এখতিয়ার থাকবে। একই ধারা ব্যাখ্যায় দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা বলতে বোঝানো হয়েছে, যে কোন মোকাদ্দমা যা সম্পত্তি বা পদের অধিকার সম্পর্কে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়।

দেওয়ানী আদালত আইন, ১৮৮৭ এর ৩ ধারায় ৫ ধরনের দেওয়ানী আদালতের কথা বলা হয়েছে। যথা

ক) জেলা  জজ আদালত
খ) অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত
গ) যুগ্ম জেলা জজ আদালত
ঘ) সিনিয়র সহকারী জজ আদালত
ঙ) সহকারী জজ আদালত


দেওয়ানী আদালতের এখতিয়ার

ক) জেলা জজ আদালত
- রিভিশন এখতিয়ার
- দেওয়ানী বিষয়বস্তুর আপীল যার মূল্যমান সর্বোচ্চ পাচ লক্ষ টাকা
- প্রবেট, ট্রেডমার্ক, কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়াদি

খ) অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত
জেলা জজ কর্তৃক প্রেরিত সকল মামলাসমূহের বিচার অত্র আদালত কর্তৃক সম্পন্ন হয়ে থাকে।

গ) যুগ্ম জেলা জজ
-  সকল প্রকার দেওয়ানী মামলা যার মূল্যমান চার লক্ষ টাকার অধিক,
- উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিষয়াদি,
- রিভিশন; জেলা জজ কর্তৃক প্রেরিত মামলাসমূহ,
-  আপীল; জেলা জজ কর্তৃক প্রেরিত মামলাসমূহ,

ঘ) সিনিয়র সহকারী জজ
দেওয়ানী প্রকৃতির মামলার বিচার যার মূল্যমান দুই লক্ষ টাকার অধিক থেকে চার লক্ষ টাকা পর্যন্ত

ঙ) সহকারী জজ
দেওয়ানী প্রকৃতির মামলার বিচার যার মূল্যমান সর্বোচ্চ দুই লক্ষ টাকা।

চ) স্মল কজেস কোর্ট
স্মল কজেস আদালত  ক্ষুদ্র মামলা নিস্পত্তি করে থাকে যার মূল্যমান সর্বোচ্চ পচিশ হাজার টাকা। 

ছ) পারিবারিক আদালত
পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ,১৯৮৫ অনুযায়ী অত্র আইনের অধীনে দায়েরকৃত পারিবারিক বিষয়াদি সংক্রান্ত বিষয়াদি যথাক্রমে- তালাক, দেনমোহর, ভরনপোষন, দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার এবং নাবালকের অভিভাকত্ব সংক্রান্ত  বিষয়াদির মামলার বিচার অত্র আদালতে সম্পন্ন হয়ে থাকে।   

ফৌজদারী আদালত

ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ৫ ধারা অনুযায়ী ফৌজদারী আদালত দণ্ডবিধিতে বর্ণিত সকল অপরাধের তদন্ত, অনুসন্ধান, বিচার ও অন্য সকল ব্যবস্থা অত্র বিধি অনুসারে করতে হবে।  অন্য কোন আইনে ব্যতিক্রম না থাকলে বর্ণিত সকল অপরাধের তদন্ত, অনুসন্ধান, বিচার ও অন্য সকল ব্যবস্থা অত্র বিধি অনুসারে করতে হবে।  

ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ৬ ধারা অনুযায়ী ফৌজদারী আদালত ২ প্রকার। যথা

ক) দায়রা আদালত
খ) ম্যাজিস্ট্রেট আদালত

ক) দায়রা আদালত
প্রত্যেক বিভাগে নিম্নবর্ণিত দায়রা আদালত থাকবে-
১) দায়রা জজ আদালত
২) অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত
৩)সহকারী দায়রা জজ আদালত

মেট্রোপলিটন  এলাকায় দায়রা আদালত
১) মহানগর দায়রা জজ আদালত
২) অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত
৩) যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালত

খ) ম্যাজিস্ট্রেট আদালতঃ 
১) চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত,
২) অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত
৩) প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত
৪) দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত
৫) তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত

মেট্রোপলিটন এলাকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত
১) চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত
২) অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত
৩) মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত

ফৌজদারী আদালতের এখতিয়ার

১) দায়রা জজ আদালত এবং অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত
আইনে উল্লেখিত সকল প্রকারের দন্ড প্রদানে অত্র আদালত সক্ষম তবে মৃত্যুদন্ড প্রদান করলে উক্ত রায় হাইকোর্ট কর্তৃক অনুমোদিত হতে হয়।

২) যুগ্ম দায়রা জজ আদালত
অত্র আদালত মৃত্যুদন্ড,যাবজ্জীবন কারাদন্ড অথবা দশ বছরের অধিক কারাদন্ড ব্যতীত আইনে উল্লেখিত সকল প্রকার সাজা  প্রদানে সক্ষম।

৩) প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত/ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত
অত্র আদালত পাচ বছর পর্যন্ত   সশ্রম কারাদন্ড  এবং দশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা  প্রদানে সক্ষম।

৪) দ্বিতীয় শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত
অত্র আদালত তিন বছর পর্যন্ত   সশ্রম কারাদন্ড  এবং পাচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা  প্রদানে সক্ষম।

৫) তৃতীয় শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত
অত্র আদালত দুই বছর পর্যন্ত   সশ্রম কারাদন্ড  এবং দুই হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা  প্রদানে সক্ষম।

মন্তব্য লিখুন