সর্বশেষ

সমালোচনা বা ভিন্নমত প্রকাশে পাকড়াও করা সহজ | ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পর্ব ১


নাজমুল হোসাইন পাপ্পু

Digital Security Act নামটা শুনার সাথে সাথেই অনেকেই এটাকে Black Law হিসেবে অভিহিত করেন। অনেক বিজ্ঞ ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিবর্গ মনে করেন এটি সংবিধানের সাথে inconsistent. যেখানে মানুষের freedom of speech কে বাধা প্রদান করে।আবার অনেকেই তো বলে থাকেন Government Protection Act. এর কারণ মূলত এখানে এমন কিছু ধারা রাখা হয়েছে যা দ্বারা সরকারের সমালোচনা করলে বা ভিন্নমত প্রকাশ করলে সহজেই এই আইনের আওতায় পাকড়াও করা সহজ।এমন এই আইনের সাজা খুবই severe সেই সাথে cognizable যার ফলে জামিন পাওয়া ও দুষ্কর।


কী আছে সেই সব ধারায়?
ধারা ২১ হচ্ছে সরকারের জন্য একটা বড় ট্রাম কার্ড।এই ধারাটি দিয়েই অনলাইনে নিজেদের মতামত প্রকাশকারীদের সিংহভাগকে ফাঁদে ফেলানো সম্ভব। বলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা,জাতির পিতা,জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রপাগাণ্ডা বা প্রচারণা করলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের সাজা বা এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। যেহেতু এখানে প্রপাগাণ্ডাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি তাই এই অর্থটি সরকারের জন্য একটি অন্যতম yorker boll হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ রয়ে গেছে এবং যেকোনো ধরণের দ্বিমতকে বা মন্তব্যকারীকে এই ফাঁদে ফেলে সাজার আওতায় আনা খুবই সহজ।যেহেতু আমাদের দেশের কোর্টসমূহ Literal Interpretation ফলো করে তাই এখানে অভিযুক্ত ব্যক্তি চাইলেও তার ব্যাখাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে না।  যার হলে এমন grievous punishment ভোগ করতে হবে।

তারপর আসছে ধারা নং ২৫, ২৬ এটি মূলত সাংবাদিকদের যারা বিশেষ করে অনুসন্ধানমূলক সাংবাদিকতা করে তাদের সরকারী অফিসের দূর্নীতি, ঘুষ,টেন্ডারবাজী, নিয়োগ-বাণিজ্য এই ধরণের অপকর্ম পাবলিশ করা থেকে বিরত রাখার জন্য যথেষ্ট। বলা হয়েছে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ণ করার মতো কিছু যদি প্রচার করে বা করতে সাহায্য করে বা অনুমতি ব্যাতীত যদি তথ্য সংগ্রহ করে এবং প্রচার করে তাহলে ২৫,২৬ ধারা অনুসারে সর্বোচ্চ৩- ৫ বছরের  সাজা ৩-৫ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড হতে পারে।

অর্থ্যাৎ এই ধারা দুটি দ্বারা মূলত অনুসন্ধানমূলক সাংবাদিকতাকে নিরুৎসাহিত করে যার ফলে সরকারি /বেসরকারি অফিসের দূর্নীতি বা অনুসন্ধান করা অসম্ভব। 

ধারা ২৭ cyber terrorism নিয়ে কথা বললে ও এর উপধারা (ঘ) তে সুক্ষ্ম একটি কথা insert করা হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে অনলাইনে যদি বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ কোনো দেশের বিরুদ্ধে কোনো তথ্য অনলাইনে প্রবেশ করায় যা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বা জনশৃংখলার পরিপন্থী তাহলে তা সাইবার সন্ত্রাসী কার্যক্রম হিসেবে বিবেচিত হবে। 

অর্থ্যাৎ দেশের বন্ধু রাষ্ট্র বলতে কোন কোন দেশকে বুঝানো হয়েছে আশা করি বুঝতে পেরেছেন আর যদি না পেরে তাদের সমালোচনা করেন বা যদি সরকারের কাছে মনে হয় করেছেন তাহলে ১৪ বছর জি ১৪ বছরের কারাবাস ভোগ করতে হবে আর যদি ২ য় বার এমন কোনো কাজ করেন তাহলে যাবজ্জীবন ১৪ শিকায় থাকতে হবে। এইবার বুঝলেন তো এটাই Digital Security Act.

লেখক
ছাত্র
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস
আইন বিভাগ (তৃতীয় বর্ষ)


[আপনিও বিশেষ ফিচার বিভাগে লেখা পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠাতে ইমেইল করুন ain24team@gmail.com ।]

No comments