ঢাকা আইনজীবী সমিতির বাজেট ও কিছু কথা
অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবু
ঢাকা আইনজীবী সমিতির ২০২০-২১ সনের প্রস্তাবিত বাজেটঃ
সম্ভব্য আয়ঃ ১১৪,৯৫,৩৭৬৪২.০০ টাকা
সম্ভব্য ব্যয়ঃ ৭৪,৪২,৫০৬০০.০০ টাকা
-------------------------------------------------------
সম্ভব্য আয় ব্যয়ের উদ্বৃত্তঃ ৪০,৫২,৮৭০৪২.০০ টাকা
আগেই বলে রাখা ভাল এই মতামত সম্পুর্ন আমার ব্যক্তিগত। অনেকটা নিজের কাছে প্রশ্ন। কাউকে প্রশ্নবিদ্ধ বা সমালোচনা করা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়।বাজেট নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা করার মত জ্ঞান আমার নেই থাকার কথাও না কারন আমি অর্থনীতির ছাত্র নই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অনার্স এবং মাস্টার্স পরবর্তীতে এল এল বি।
বাজেট মিটিংয়ে উপস্থিত থেকে যে অভিজ্ঞতা হল বর্তমান কমিটি বাজেট সাব কমিটির সহিত আলোচনা করে প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন। কিছু মধ্যম সারির আইনজীবী প্রথমে কিছু বক্তব্য দেন পরে সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দেন কিছু প্রস্তাব সহ। প্রস্তাবিত বাজেটে যা থাকে তা সংশোধনের প্রয়োজন কার্যকরি কমিটি মনে করে না যদি তারা কোন ভুল না করে থাকে যেমন এই বাজেটে ইফতার বাবদ ব্যয় খাতে ১৫ লক্ষ টাকা দেখানো হয়েছে কিন্তু ইফতার তো এবার হয়নি তাই সভাপতি সাহেব অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি বলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তাছাড়া পুরো বাজেট পাশ হয়ে গিয়েছে।
#(১) আয়ের খাতে ওকালত নামার দাম একলাফে ২০০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমান দাম ৪৫০ টাকা। ১০০ টাকা যে আইনজীবী ওকালত নামা ক্রয় করবে তার একাউন্টে যোগ হবে। বাকি ১০০ টাকা কেন বর্ধিত করা হল সে সম্পর্কে কিছু বলা নেই। করোনা কালিন সময়ে এমনিতে আইনজীবীদের পকেটের অবস্থা ভাল না তার উপর এই বর্ধিত টাকা তাকে দিতে হবে। তাছাড়া আরেকটি বার সমিতি আছে মেট্রোপলিটন বার যেখানে ওকালত নামার দাম ২০০ টাকা। আইনজীবীরা যদি ও-ই বারের ওকালত নামা ক্রয় করে ব্যবহার করে তাহলে আয়ের খাতে বার ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে মনে করছি। বর্তমান কমিটি ও-ই বারের ওকালত নামা ক্রয় বন্ধ করতে পারবে কিনা আমি জানি না। তাই এই বর্ধিত দাম আমার ভালো লাগেনি। যদিও আমার ভাল মন্দে কারও কিছু যায় আসে না। এই দুর্যোগ কালীন সময়ে দাম না বাড়ালে বোধহয় স্বস্তি পেতাম।
#(২) হাজিরার টাকা ৫ টাকা থেকে বর্ধিত করে ১০ টাকা করে হয়েছে। এটা আইনজীবীদের পকেট থেকে যাবে। একটি হাজিরা ছাপাতে কত পয়সা খরচ হয় তা আমি জানি যেহেতু ২০১৮-১৯ কমিটিতে সদস্য হিসাবে ছিলাম। এত ব্যবসা করতে হবে কেন? ভোটের আগে হাত জড়িয়ে ধরে চোখের জলে ভোট নিবেন আর চেয়ারে বসে আইনজীবীদের পকেটে হাত।
#(৩) ইন্সুরেন্স বাবদ জনপ্রতি ২০০ টাকা করে আয় দেখিয়েছেন তো ভালো কথা! আইনজীবীরা কি ইন্সুরেন্স সুবিধা পায়? তাহলে কেন টাকা নেওয়া আমার বোধগম্য নয়।
#(৪) জজকোর্ট প্রাঙ্গনের টিনসেড ভেংগে হোন্ডা পার্কিংয়ের আয় ৫০ লক্ষ টাকা। জায়গা টা কি বারের? পরের জায়গা থেকে আয় করার মানসিকতা পরিহার করলে ভাল হত। জায়গাটা ফাঁকা থাকলে বরঞ্চ প্রান ভরে শ্বাস নেওয়া যেত। তাছাড়া সেড ভেংগে মটর সাইকেল রাখার জায়গা প্রস্তুতি ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ লক্ষ টাকা পক্ষান্তরে সেটি ভাংগার পর দরজা,জানালা,লাইট ফ্যান ইট ইত্যাদি থেকে কোন আয় দেখানো হয়নি। সেডটি ভেংগে লাইট,ফ্যান,ইট,দরজা,জানালা কি ভাগাড়ে ফেলে দিবেন?
#(৫) করোনায় আইনজীবীদের কিভাবে সহায়তা করা যায় তা না ভেবে জনপ্রতি ৫০০ টাকা চাঁদা ধরে ৯০ লক্ষ টাকা আয় ধরেছেন পক্ষান্তরে ব্যায় ধরেছেন ১০ লক্ষ টাকা। কিসের ব্যয় এটা। একটি করোনা টেস্টের বুথ স্থাপনের জন্য একটি ঘোষনা পর্যন্ত দেন নাই, যে বুথের অভাবে আইনজীবীরা বিনা টেস্টে করোনায় মারা যাচ্ছে। একটি বুথের জন্য আইনজীবীদের হাহাকার করতে হবে কেন? টাকা তো আমাদের পকেটের কিন্তু বুথ তৈরিতে অসুবিধা কিসে জানিনা।
#(৬) বেলবন্ড কোর্ট ফি সহ ৭৫ টাকা থেকে বর্ধিত করে ১২৫ টাকা করা হয়েছে। কেন? যেসব আইনজীবী গরীব মানুষকে বিনামুল্যে বা স্বল্প মুল্য আইনি সেবা দিতে চায় তাদের সেবার দ্বার বন্ধ করাই কি লক্ষ্য? আবার আপনারাই মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলবেন গরীবদের বিনা মুল্য সহায়তা করুন।
আরও অনেক জায়গায় বলার আছে কিন্তু বলে লাভ তো কিছু নেই। এই বারের মালিকানা কি শুধু বার নেতাদের নাকি সকল আইনজীবীর। এই দুর্যোগকালীন সময়ে অপ্রয়োজনীয় ব্যায় না বাড়ালে আয়ের জন্য আইনজীবীদের পকেটে হাত দিতে হতনা। ধন্যবাদ বার নেতাদের, সহানুভূতি সাধারন আইনজীবীদের প্রতি যারা অনেক পরিশ্রমের টাকা সমিতিতে জমা দেন কিন্তু সেই টাকা ব্যবহারে অনেক অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়। এই কমিটির প্রতি অনুরোধ আইনজীবীদের কষ্টের টাকা খরচে একটু মিতব্যয়ী হোন সর্বশেষ শুভকামনা রইল নির্বাচিত কমিটির প্রতি।
লেখক
কার্যনির্বাহী সদস্য ২০১৮-১৯
ঢাকা আইনজীবী সমিতি
(ফেসবুক টাইমলাইন হতে সংগৃহীত)
[আপনিও মতামত বিভাগে লেখা পাঠাতে পারেন। লেখা পাঠাতে ইমেইল করুন ain24team@gmail.com ।]
মন্তব্য লিখুন